দেশি মাছশূন্য হওয়ার উপক্রম

মধুমতিতে বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার

Daily Inqilab আনোয়ার জাহিদ, ফরিদপুর থেকে

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মধুমতি নদীতে বাঁশ ও জাল দিয়ে আড়াআড়ি বাঁধে অবাধে মাছ শিকার করা হচ্ছে। দেশি মাছ নদ শূন্য হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ছে। উপজেলার বানা ইউনিয়ন দিঘলবানা গ্রামের খেয়াঘাটের দক্ষিণ পাশে আধা কিলোমিটার দূরে এ বাঁধ নির্মাণ করে মাছ শিকার করছে। এতে মাছের চলাচলে বাঁধা ও নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়েছে। অপরদিকে সাধারণ জেলেরা নদে মাছ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, মধুমতি নদীতে এখন পানি তুলনামূলক অনেক কম হওয়ায় বাঁশ ও জাল দিয়ে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দেয়া হয়েছে। বাঁধটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ মিটার।

নদীর এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত বাঁশের বাঁধের মাঝ দিয়ে পাতা হয়েছে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, কাঁথা জাল। এরই একটি নির্দিষ্ট দূরুত্বে জাল দিয়ে বিশেষ ধরনের ফাঁদ তৈরি করা হয়েছে। এসব ফাঁদে মাছ এসে আটকে যায়। প্রতিদিন তিন থেকে চার বার মাছ আহরণ করা হচ্ছে এ বাঁধ থেকে। গত কয়েক বছর ধরে এভাবে মাছ শিকার করা হলেও প্রশাসনের থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, পাশের মোহম্মদপুর উপজেলার বাসিন্দা সজিবের নেতৃত্বে ১২ জন মিলে এ বাঁধটি দিয়েছেন। বাঁধটি দিতে প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রধানত বেলে (বাইল্যা মাছ) মাছ শিকার করার জন্য এ ধরনের বাঁধ দেয়া হয়। বাঁধ দেয়ার পর আর খুব একটা খরচ ও কষ্ট করতে হয় না। নৌকা নিয়ে বসে থেকেই মাছ পাওয়া যায়।

তারা আরো জানান, পাঙ্গাশ থেকে শুরু করে ইলিশ, বেলে, খসল্লা, পাবদা, আইড়, রিটা সব ধরণের মাছ আটকায় এ জালে। ফাঁদে একবার আটকে গেলে মাছ আর বের হতে পারে না। এভাবে আড়াআড়িভাবে বাঁধ দেয়ার কারণে অন্য জেলেরা স্বাভাবিকভাবে মাছ ধরতে পারে না। এতে অবৈধভাবে বাঁধ দেয়া ব্যক্তিরা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও গরিব জেলেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পাশাপাশি মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে মিঠা পানির নদ।

এই বিষয়ে কথা হয় আলফাডাঙ্গা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে। তিনি ইনকিলাবকে বলেন, জলাশয়ে কোনো ধরনের বাঁধ, স্থায়ী অবকাঠামো বা অন্য কোনোভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। জলাশয়ে পানিপ্রবাহ ও মাছের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে। বাঁধ দিয়ে বা অন্য কোনোভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এ প্রসঙ্গে বাঁধটির মালিক সজিব ইনকিলাবকে বলেন- কয়েক মাস আগে বাঁধটি দেয়া হয়েছে। মোহাম্মদপুর এলাকার ১২ জন মিলে বাঁধটি দিয়েছি। খরচ হয়েছে প্রায় তিন-চার লাখ টাকা। তিনি আর কথা না বাড়িয়ে বলেন, আপনি ঘাটে আসেন দেখে যান, ভাগি কয়জন বলা যাবে না।

সকল প্রশ্নের উত্তরও দেয়া যাবে। আমি আল আমিনের বাড়ির পাশে থাকি, সে দেখাশোনা করে। তবে বেলে মাছ বেশি শুধু ধরা পরে।

আল আমিন একটু দম্ভো নিয়ে বলেন, আপনি লেখালেখি করে আমার যা পারেন তাই কইরেন। এই বাঁধ পারলে কেটে দিয়েন।

তবে সালথা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অ.দা.) শাহ মো. শাহরিয়ার জামান সাবু ইনকিলাবকে বলেন, আলফাডাঙ্গা উপজেলায় আমি অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছি। মোবাইলে বক্তব্য দেয়া যাচ্ছে না, অফিসে আসবেন সাক্ষাত হবে। বাঁধ অপসারণের পদক্ষেপ নেবেন কি না উত্তর হা না জানতে চাইলে বারবার বলনে কোন কিছুই শোনা যাচ্ছে না।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) একেএম রায়হানুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে মাছ শিকার করা কোনো সুযোগ নেই। নদীতে বাঁধ আছে আমার জানা নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাঁধটি অপসারণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আমি ১৭ নভেম্বর এসিল্যান্ড ও ১ ডিসেম্বর ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করি, অভিযোগ পাওয়ার পর সার ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা, টিটা বাওড়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার অপসারণ, সরকারি রাস্তায় জায়গা মুক্ত করা এবং যে কোন ধরনের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। অভিযান চলমান থাকবে।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রাইখালী যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
ফরিদগঞ্জে গো-খাদ্যের তীব্র সঙ্কট
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে যুবককে বেঁধে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল
ধামরাইয়ে ফসলি জমির মাটি কাটায় ৬ ভেকু ও ৩ ড্রেজার জব্দ
দোয়ারাবাজারে তাবলীগের সাদপন্থিদের নিষিদ্ধে মানববন্ধন
আরও

আরও পড়ুন

পেকুয়ায় বৃহত্তর তাফসির মাহফিল ঘিরে উপজেলা হলরুমে সর্বশেষ প্রস্তুতির বৈঠক

পেকুয়ায় বৃহত্তর তাফসির মাহফিল ঘিরে উপজেলা হলরুমে সর্বশেষ প্রস্তুতির বৈঠক

প্রতিবেশী দেশ থেকে ইসকনের নামে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র করেছে : জামায়াত নেতা মুজিবুর রহমান

প্রতিবেশী দেশ থেকে ইসকনের নামে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য চেষ্টা ও ষড়যন্ত্র করেছে : জামায়াত নেতা মুজিবুর রহমান

র‌্যাবের অভিযানে জাহাজে সাত খুনের ঘটনার হোতা গ্রেফতার

র‌্যাবের অভিযানে জাহাজে সাত খুনের ঘটনার হোতা গ্রেফতার

গোপন তথ্য ফাঁস করছেন পুলিশ কর্মকর্তারাই

গোপন তথ্য ফাঁস করছেন পুলিশ কর্মকর্তারাই

ব্রাহ্মণপাড়ায় আতঙ্কের আরেক নাম অবৈধ ট্রলি ট্রাক্টর

ব্রাহ্মণপাড়ায় আতঙ্কের আরেক নাম অবৈধ ট্রলি ট্রাক্টর

টেস্টে ফেরা আরও দীর্ঘ হচ্ছে রশিদের

টেস্টে ফেরা আরও দীর্ঘ হচ্ছে রশিদের

দেশের ৯৮ ভাগ মানুষ মুসলমান, ২ ভাগ অন্য ধর্মাবলম্বী: বিশ্ব জরিপ সংস্থা

দেশের ৯৮ ভাগ মানুষ মুসলমান, ২ ভাগ অন্য ধর্মাবলম্বী: বিশ্ব জরিপ সংস্থা

কাপ্তাইয়ে চন্দ্রঘোনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে শুভ বড় দিন উদযাপন

কাপ্তাইয়ে চন্দ্রঘোনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে শুভ বড় দিন উদযাপন

ক্ষমতাচ্যুত আ.লীগ জনগণ থেকে সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন ছিল: আমিনুল হক

ক্ষমতাচ্যুত আ.লীগ জনগণ থেকে সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন ছিল: আমিনুল হক

চার দিন ধরে স্কুল ছাত্রী নিখোঁজ, থানায় অপহরণের অভিযোগ

চার দিন ধরে স্কুল ছাত্রী নিখোঁজ, থানায় অপহরণের অভিযোগ

মুন্সীগঞ্জে হত্যা মামলায় ২ ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

মুন্সীগঞ্জে হত্যা মামলায় ২ ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

তোরেসকেও হারাল বার্সা

তোরেসকেও হারাল বার্সা

সিলেটে বর্ণিল আয়োজনে বড়দিন উদযাপন

সিলেটে বর্ণিল আয়োজনে বড়দিন উদযাপন

সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় গফরগাঁওয়ের ২ যুবক নিহত

সৌদিতে সড়ক দুর্ঘটনায় গফরগাঁওয়ের ২ যুবক নিহত

বরগুনা প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন: সোহেল হাফিজ সভাপতি, সালেহ্ সম্পাদক

বরগুনা প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন: সোহেল হাফিজ সভাপতি, সালেহ্ সম্পাদক

চাঁদপুরে জাহাজে নিশংস হত্যাকাণ্ড: ৭ দিনের রিমান্ডে ইরফান

চাঁদপুরে জাহাজে নিশংস হত্যাকাণ্ড: ৭ দিনের রিমান্ডে ইরফান

টঙ্গীতে হত্যার প্রতিবাদে সোনারগাঁওয়ের বিক্ষোভ সমাবেশ

টঙ্গীতে হত্যার প্রতিবাদে সোনারগাঁওয়ের বিক্ষোভ সমাবেশ

মাদারীপুরের শিবচরে ঘর পেয়ে খুশি বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধি আলেকজান বেগম

মাদারীপুরের শিবচরে ঘর পেয়ে খুশি বাক ও শ্রবন প্রতিবন্ধি আলেকজান বেগম

পুঠিয়া-দূর্গাপুরের সাবেক সাংসদ ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

পুঠিয়া-দূর্গাপুরের সাবেক সাংসদ ডা. মনসুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে কুষ্টিয়ায় নেই পর্যটকের ভিড়

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অভাবে কুষ্টিয়ায় নেই পর্যটকের ভিড়